তাওয়ারিক আলম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৮ ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি সহযোগী অধ্যাপক। চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগে শিক্ষকসংকট থাকলেও তিনি সাত বছর ধরে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে প্রেষণে আছেন। বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক পদে ২০১৫ সালে যোগদান করে চার বছর পর আবার বোর্ডের উপপরিচালক (হিসাব ও নিরীক্ষা) হন।
শিক্ষা বোর্ডের পদসোপান অনুযায়ী পদটি ক্যাডারের হলেও কৌশলে তিনি পদটি দখলে রেখেছেন।
অধ্যাপক মৃণাল চন্দ্র নাথ প্রেষণে শিক্ষা বোর্ডের অডিট অফিসার। ১২ বছর ধরে এই পদে। বোর্ডের প্রবিধানমালা অনুযায়ী পদটি সহকারী অধ্যাপক মর্যাদার এবং গ্রেড হিসেবে ষষ্ঠ। কিন্তু তিনি চতুর্থ গ্রেডের হয়েও এই পদে আছেন।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে শুধু তাওয়ারিক ও মৃণাল চন্দ্রই নন, তাঁদের মতো আরো ১৩ জন কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরে প্রেষণে কর্মরত। এর মধ্যে সিনিয়র হয়েও বেশ কয়েকজন জুনিয়র পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড। একই সঙ্গে বছরের পর বছর প্রেষণে দায়িত্ব পালন করা এসব কর্মকর্তার মূল কর্মস্থলে ফেরার কোনো লক্ষণ নেই। তাঁদের মধ্যে সাত থেকে সর্বোচ্চ ১৯ বছর পর্যন্ত প্রেষণে দায়িত্ব পালন করছেন আটজন কর্মকর্তা, যা শিক্ষা বোর্ড অর্ডিন্যান্স ১৯৬১ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রেষণ নিয়োগবিধির পরিপন্থী।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘সরকারি নিয়ম হলো—কোনো কর্মকর্তা তিন বছরের বেশি প্রেষণে থাকতে পারেন না। যাঁরা শিক্ষা বোর্ডে দীর্ঘদিন প্রেষণে কর্মরত আছেন তাঁরা নিজেরাই ভালো বলতে পারবেন, কিভাবে তাঁরা আছেন। এ বিষয়ে আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে না। ’
অনুসন্ধানে জানা যায়, বোর্ডের তিনটি পরীক্ষায় রেজিস্ট্রেশন ফরম পূরণ ও পরীক্ষার ফল ঘোষণায় ছয়টি বোনাস পাওয়া যায় বেতনের বাইরে। ফলে বেশি বোনাস পাওয়ার আশায় বছরের পর বছর বোর্ডের পদগুলো দখল করে আছেন মোট ১৫ জন কর্মকর্তা। জুনিয়র পদে সিনিয়র কর্মকর্তা থাকায় বোর্ডকে প্রতিবছর বেতন-ভাতা খাতে অধিক অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের বিভিন্ন পদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা জানা গেছে, সম্পাতা তালুকদার দর্শন বিভাগের প্রভাষক পদে রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজ থেকে বোর্ডে আসেন ১৯৯৯ সালে। খুব কম সময় সরকারি কলেজে চাকরি করলেও ২০০৯ সাল থেকে ১২ বছর ধরে বোর্ডে সহকারী সচিব-২ পদে কর্মরত আছেন তিনি।
সহকারী সচিব-১ পদে কর্মরত আছেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। তিনি ২০১৫ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত সাত বছর ধরে একই পদে আছেন।
খোরশেদ আলম বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, বোর্ডের সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক। বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত। তিনি ২০০২ থেকে ১৯ সাল পর্যন্ত এ পদে কর্মরত ছিলেন। স্ত্রীর দায়ের করা নারী নির্যাতন মামলার কারণে তিনি সাময়িক বরখাস্ত হলেও বিধি মোতাবেক শিক্ষা বোর্ড থেকে সরকারি সুবিধা পাচ্ছেন। আর শুক্লা রক্ষিত রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি ২০১১ সাল থেকে ১০ বছর ধরে বোর্ডের সহকারী মূল্যায়ন কর্মকর্তা পদে কর্মরত।
এদিকে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ হালিম ২০১০ সাল থেকে ১১ বছর ধরে বোর্ডের উপকলেজ পরিদর্শক পদে কর্মরত আছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী প্রেষণে তিন বছর চাকরির কথা থাকলেও তিনি পদ আঁকড়ে আছেন।
এ ছাড়াও বোর্ডের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক এ কে এম ইকবাল হোসেন। হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার পদটি ষষ্ঠ গ্রেডের। কিন্তু এ কে এম ইকবাল হোসেন চতুর্থ গ্রেডের (অধ্যাপক) কর্মকর্তা। তিনি ১২ বছর ধরে এই পদে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের একাধিক স্থায়ী কর্মকর্তা বলেন, ‘২০০৮ সালে পদোন্নতি পাওয়ার কথা ১৩ জন স্থায়ী কর্মকর্তার। আমরা এখনো পদোন্নতি পাইনি। শুধু প্রেষণে আসা কর্মকর্তারা একই পদে দীর্ঘদিন থেকে যাওয়ার কারণে আমাদের পদোন্নতি আটকে আছে। ’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অডিট অফিসার অধ্যাপক মৃণাল চন্দ্র নাথ বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্তে আমি দীর্ঘ ১২ বছর ধরে শিক্ষা বোর্ডে প্রেষণে কর্মরত আছি। এখানে আমার কিছু করার নেই। সরকার চাইলে চলে যাব। ’
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের চলতি দায়িত্বে থাকা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক আবদুল আলিম সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে কর্মকর্তারা প্রেষণে দায়িত্ব পালন করছেন। বোর্ডের অনেক পদ আছে যেগুলো প্রেষণে আসা কর্মকর্তারাই দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।